আমাদের সমাজে কোন নারীর জীবনই খুব সহজ না: রুনা খান

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রুনা খান । শাড়ি: সনি রহমান । ছবি: নূর এ আলম

রুনা খান । শাড়ি: সনি রহমান । ছবি: নূর এ আলম

দারুণ সময় পার করছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খান। আজ তার জন্মদিনে ভাসছেন ভক্ত, সহকর্মীদের শুভেচ্ছা। আসছে ১৫ জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে তার সিনেমা ‘নীলপদ্ম’। সমসাময়িক বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ

রুনা খান । ছবি: নূর এ আলম

জন্মদিনের শুভেচ্ছ...

বিজ্ঞাপন

ধন্যবাদ। জন্মদিনে আমি কখনোই কোন আয়োজন করি না। আমার জন্মদিন স্পেশ্যাল করে দেন আমার পরিবার, আমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী এবং দর্শক। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনেকের ভালোবাসা ও শুভকামনা পাওয়ার একটা সুযোগ ঘটে জন্মদিনে। আমি বেশ এনজয় করি।

রুনা খান । ছবি: নূর এ আলম

আসছে ১৫ জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে তার সিনেমা ‘নীলপদ্ম’। এটা নিয়ে অনুভূতি কেমন?

বিজ্ঞাপন

এবারই প্রথম নয়, এর আগেও ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এর ‘বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগ’-এ আমার অভিনীত একাধিক ছবি জায়গা করে নিয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘হালদা’ ও সাজেদুল আওয়াল পরিচালিত ‘ছিটকিনি’। ‘হালাদা’ ছবিটি সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কারও জয় করে নেয়।

তবে কিছু প্রাপ্তি থাকে যার কোন তুলনা হয় না। একজন শিল্পী যতোবারই জাতীয় পুরস্কার পাক না কেন, অনুভূতি একই রকম আনন্দের থাকে। আমার কাছে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ নিজের ছবি থাকাও একই রকম আনন্দ ও সম্মানের। কারণ এটি আমাদের দেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক সবচেয়ে বৃহৎ ও সমৃদ্ধ আয়োজন।

রুনা খান । শাড়ি: সনি রহমান । ছবি: নূর এ আলম

আমার ‘নীলপদ্ম’ ছবিটি ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ দুদিন প্রদর্শীত হবে। প্রথম শো হবে ১৫ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা ৭টায়, জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে। পরের শোটি হবে উৎসবের শেষ দিন অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি রবিবার বিকেল ৩টায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে। আমি দুদিনই উপস্থিত থেকে ছবিটি দর্শকের সঙ্গে দেখতে চাই। সকল দর্শককে ছবিটি দেখার আমন্ত্রণ জানাই। যতো বেশি দর্শকের কাছে ছবিটি পৌঁছবে ততোই আমাদের পরিশ্রম সার্থক বলে মনে হবে। আমি চাই ছবিটি দেখে দর্শক তাদের সব ধরনের ফিডব্যাক আমাদের দেবেন।

রুনা খান । শাড়ি: সনি রহমান । ছবি: নূর এ আলম

‘নীলপদ্ম’ ছবিটি নিয়ে কিছু জানান...

এটি দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের জীবন, সামাজিক পরিচয় ও অধিকারের গল্প নিয়ে নির্মিত। ছবিটি পরিচালনা করেছেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা তৌফিক এলাহী। নির্মাতার এটি প্রথম ছবি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, এটা একটা সরল গল্প। জটিল কিছু না। গল্পধর্মী ছবি। অসাধারণ সব সহশিল্পী পেয়েছি। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই রাশেদ মামুন অপু ভাইয়ের কথা। তিনি আমাকে সহশিল্পী হিসেবে ভীষণ সাহায্য করেছেন। সব মিলিয়ে একেবারে সরল ও সরলতার ভেতর দিয়ে কাজটি আমরা শেষ করেছি। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছন রোকেয়া প্রাচী, একে আজাদ সেতু, শাহেদ আলী, সুজাত শিমুল প্রমুখ।

রুনা খান । ছবি: নূর এ আলম

২০২৩ সালের এমনই এক শীতে (জানুয়ারি) ‘নীলপদ্ম’র শুটিং করতে প্রথমবার রাজবাড়ী জেলার বিখ্যাত দৌলতদিয়ায় যাই। বেশকিছু দিন ছিলাম ওখানে। জীবনে প্রথম গেলাম সেখানে। নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম। যে অভিজ্ঞতা মানুষ হিসেবে অসম্ভব সমৃদ্ধ ও সুন্দর। দৌলতদিয়া সম্পর্কে যারা জানেন, তারা তো জানেনই। যারা জানেন না, তাদের জন্য বলা, দৌলতদিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পতিতাপল্লী। এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় গণিকালয়গুলোর একটি। এখানে প্রায় চার হাজার যৌনকর্মী পতিতাবৃত্তিতে জড়িত। ‘নীলপদ্ম’র মূল চরিত্র নীলাকেও দেখানো হয়েছে এই পল্লীর একজন যৌনকর্মী হিসেবে। নীলার চরিত্রের মাধ্যমে উঠে এসেছে এই পেশার মানুষের জীবনের গল্প। চরিত্র হিসেবে এটা যে কোনো অভিনেত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জিং এবং স্পর্শকাতরও বটে।

রুনা খান । শাড়ি: সনি রহমান । ছবি: নূর এ আলম

ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন কিভাবে?

অভিনেতা সজল ভাই একদিন আমাকে ফোন করে বলেন, ‘গল্পটা আমি শুনেছি। তোর জন্য চরিত্রটা ঠিকঠাক হবে। তুই সিটিং দিয়ে দেখ। পছন্দ হলে করিস।’ এরপর নির্মাতা তৌফিক ভাই যোগাযোগ করলেন। গল্পটা শুনলাম। চিত্রনাট্য পড়লাম। আমার পছন্দ হলো। কাজটি করে ফেললাম।

আমি মনে করি, অর্থ বা জনপ্রিয়তার বাইরে গিয়ে প্রতিজন শিল্পীর ভেতরেই এমন কিছু চাওয়া থাকে; যেটা সে নিজের কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চায়। ‘নীলপদ্ম’ আমার কাছে তেমনই একটা কাজ। যে কাজটির মাধ্যমে সমাজকে কোনো বার্তা দিতে চাইনি, তবে একই রাষ্ট্রের দুটি আলাদা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে চেয়েছি। এই ছবিটির মাধ্যমে দৌলতদিয়ার একজন নীলার জীবনের গল্পটি পৌঁছে দিতে চাই সমাজের প্রতিটি স্তরে থাকা তরুণ দর্শকের কাছে। একজন ক্ষুদ্র অভিনয়শিল্পী হিসেবে এটা আমার মনের ভেতরের সুপ্ত ইচ্ছাও বলতে পারেন।

রুনা খান । ছবি: নূর এ আলম

এই ছবিতে আপনার চরিত্র ‘নীলা’র সম্পর্কে কিছু বলুন...

‘নীলপদ্ম’ মূলত নীলার জীবনের জার্নির গল্প। সে একজন যৌনকর্মী। ওই শ্রেণির মানুষের জীবন, সামাজিক অবস্থা, সংগ্রামের গল্প বা পরিণতির গল্প এটা। আসলে জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমি বুঝেছি, নারী যে কোন অবস্থানেরই হোক না কেন, কোথাও গিয়ে এক সূত্রে গাথা। নারীকে আমাদের সমাজে পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে কিংবা অন্য যে কোনভাবে একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কোন নারীর জীবনই খুব সহজ না।

রুনা খান । ছবি: নূর এ আলম

নারীদের এই পরিস্থিতির জন্য কি পুরুষদের দায়ী করবেন?

না, আমি তা সব সময় মনে করি না। পুরুষতান্ত্রিকতা মূলত একটি মানসিকতা। যার ফলে সমাজে পুরুষের আধিপত্য তৈরি হয়। সেটা আমাদের সমাজেও আছে। কিন্তু আমি আমার জীবনে এমন অনেক পুরুষ দেখেছি যারা ভীষণ মানবিক মানুষ। তারা নারীদের অধিকার দিতে কিংবা নারীর চলার পথ কিভাবে মসৃন করা যায় সেই চেষ্টা করে। আবার অনেক নারীকে দেখেছি যারা অসম্ভব রকমের পুরুষতান্ত্রিক! আমার মনে হয় পুরুষতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী পুরুষের চেয়ে পুরুষতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী নারীরা আরও বেশি কঠিন। তারা অপ্রাপ্তি, ঈর্ষা কিংবা নানা কারণে অন্য একজন নারীর প্রতি অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।

রুনা খান । শাড়ি: সনি রহমান । ছবি: নূর এ আলম